Monday, December 31, 2012

বার্থ ডে

পাওয়ার পয়েন্টটা মোটামোটি শেষ। এমাসের সেলসের টার্গেট ১২৩% এচিভ হয়েছে। তাই টেনশনটা কম। নাহলে গত মাসের মত আবার বসের রুদ্ররূপ দেখতে হত। রেগে গেলে বস্ যে কি বলে হয়ত নিজেও বুঝতে পারে না। আসলে এই সমস্যাটা সমস্ত সেলস এন্ড মার্কেটিং সেক্টরের। অনুপমের গানটা এখানে খুব মানায় – “যতক্ষণ তুমি জিতছ, প্রত্যেকটা মানুষ তোমার সাথে। তুমি একবার হেরে যাও, আর কেউ নেই তোমার পাশে।” আসলে এই লাইনটা জীবনের সব যায়গায়ই মানায়, কারণ জীবনটাও আসলে যে একটা সেলস এন্ড মার্কেটিং এর চাকরীর মতই। দেয়াল ঘড়ির কাঁটা রাত আঁটটা বাজার সূচনা দিল। তখনই সুজয় হাঁফতে হাঁফতে আমার কেবিনে এসে ঢুকল।
-        কি ব্যাপার সুজয়? এভাবে হাফছিস কেন?
-        স্যার, একটা প্রবলেম হয়ে গেছে। আপনি তাড়াতাড়ি ক্যণ্টিনে আসুন।
-        কি হয়েছে? খুলে বল।
-        আপনি আগে আসুন স্যার, আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
তাড়াতাড়ি করে পাওয়ার পয়েন্টটাকে সেভ করে রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম। সুজয় আগে আগে ছুটছে। ক্যান্টিনটা আমাদের উপরের তলায়। যাওয়ার সময় দেখলাম কেউ নিজের ডেস্কে নেই। সাধারণত নয়টার আগে কেউ অফিস থেকে বের হতেই পারে না। বুঝলাম সব ক্যান্টিনেই জমায়েত হয়েছে। সুজয় দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
-        স্যার, আপনি আগে যান।
মনে একটা সংশয় নিয়ে দরজাটা খোললাম। আমার সংশয় সেকেন্ডের মধ্যে সারপ্রাইসে বদল হয়ে গেল যখন সবাই একসাথে গেয়ে উঠল – “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার স্যার, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ”।
এতক্ষণে বোঝতে পারলাম কেন বিকেল থেকে অফিসটা এত ফাঁকা লাগছিল। পাওয়ার পয়েন্টের চক্করে তখন গা লাগাই নি। এখন বুঝতে পারছি যে আসলে সবাই মিলে এখানে আমার সারপ্রাইস বার্থডে পার্টীর প্রস্তুতি করছিল।
-        স্যার, এবার কেকটা কেটে ফেলুন। আর সহ্য হচ্ছে না। (বলল পেটুক সুমন)
-        হ্যাঁ হ্যাঁ, চল সবাই মিলে কাটব এন্ড থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ্ ফর দিস সারপ্রাইস।
এই বলে কেকটা কেটে পার্টি স্টার্ট হল। সবাই গানে নাচে মেতে উঠেছে। আমাকেও এক দুবার পা মেলাতে হল। তবে এখন আর বয়সের কাছে হার মানতে হয়। গত রাতেই ৪৯টি বছর কাটিয়ে ফেললাম এই পৃথিবীতে। আজ তা উৎযাপনও হয়ে গেল।
এই ফেলে আসা ৪৯টি বছরে অনেক কিছু পেয়েছি- টাকা, প্রোমোশন, সম্মান, তিরস্কার, বাড়ী, গাড়ী, টার্গেট, বাজেট, ধূর্ততা, ভালোবাসা… ভালোবাসা!! না, সেটা নেই। যা পেয়েছিলাম, তাও এই কেরিয়ারের দৌড়ে কখন যে হারিয়ে দিলাম, বুঝতেও পারিনি। যখন বুঝেছি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আজও মনে পরে সেই রাতের কথা। সেদিন ছিল আমার ৩৩তম জন্মদিন। শর্মিষ্ঠা আমার জন্যে এমনই একটা পার্টীর প্রস্তুতি করে রেখেছিল। শর্মিষ্ঠা আমার স্ত্রী। আমি কথাও দিয়েছিলাম যে সেই সন্ধ্যাটা পুরোটাই আমি আমার পরিবারের সাথে কাটাব। কিন্তু আমি কথা রাখতে পারি নি। সেলসের টার্গেট এচিভ করার নেশায় আমি সব ভুলে গিয়েছিলাম। রাত ১০টার সময় শর্মিষ্ঠা যখন আমাকে ফোন করল, আমি তখন আরেক শহরে ডিসট্রিবিউটারের সাথে মিটিংএ। দুদিন পর যখন বাড়ী ফিরলাম, ফাঁকা বাড়ীতে শুধু একটা নোট্ রাখা ছিল –
“আমি আর আমার ছেলে তোমার বাড়ী এবং তোমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো। ইতি, শর্মিষ্ঠা”
হঠাৎ মনে হয়েছিল চারপাশের সব কিছু যেন ছিটকে যাচ্ছে, আর আমি পড়ে আছি একা বিশাল মরুভূমির মধ্যে। তারপর অনেক চেষ্টা করেছি স্ত্রী সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু শর্মিষ্ঠার একটাই উত্তর ছিল –
“তোমার প্রথম ভালোবাসা তোমার চাকরী, দ্বিতীয় হয়ে আমি আর থাকতে পারব না”।
শুধু এটুকুই নয়, আজ ১৬ বছর হয়ে গেল; শর্মিষ্ঠা আমাকে আমার ছেলের মুখটুকুও দেখতে দেয়নি। সেই এক বছর তিন মাসের ছেলেকে শেষ দেখেছিলাম, আজ সে কেমন দেখতে হল তাও জানি না। এসব ভাবতে ভাবতে দু ফোটা জল চোখের সীমানা ডিঙিয়ে কখন যে বয়ে পড়ল, বুঝতেও পারি নি।
আর ভালো লাগছিল না এইখানে। তাই সবাইকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। গাড়ীতে ঢোকার সময় মোবাইলটা বেজে উঠল।
-        হ্যালো
-        (নীরবতা...)
-        হ্যালো। কে বলছেন?
-        মেনি মেনি হেপি রিটার্নস্ অফ দা ডে।
-        কে! শর্মিষ্ঠা?
-        গলাটা ভোলনি মনে হচ্ছে।
-        কিভাবে ভুলব! এই আওয়াজটা যে আজও আমার কাছে সব থেকে মিষ্টি।
-        খুব, খুব মনে পড়ছিল তোমার কথা। আজ সকাল থেকেই। তাই ফোন না করে আর পারলাম না।
-        শর্মিষ্ঠা! আমরা কি আবার একটা শুরু করতে পারিনা।
-        লাভ কি। তুমি তোমার কাজ নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
-        না শর্মিষ্ঠা। ঢের হয়েছে। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি টাকার পেছনে ছুটছিলাম। ভেবেছিলাম টাকা দিয়ে তোমাদের সব সুখ দিতে পারব। আজ আমার কাছে অনেক টাকা আছে, কিন্তু কাউকে একটুও সুখ দিতে পারি নি। শুধু ছুটেই যাচ্ছি, অজানা গন্তব্যের খোঁজে। আমি আর পারছি না। তাই রিটায়ার্মেন্ট নিচ্ছি। বস্ এর সাথে আগেই কথা বলে রেখেছি। আমার এই নতুন জীবনে আমার পরিবারকে কি আবার কাছে ফিরে পাব না?
-        তোমার কাজটা কখনই আমার প্রবলেম ছিল না। প্রবলেমটা ছিল কাজটা তোমার কাছে তোমার পরিবারের চেয়ে বেশী প্রাধান্য পাচ্ছিল। এখন হয়ত প্রাধান্যটা আবার ফিরে পাওয়া যাবে। আমরা আসছি, কালকেই।
-        না, আমি আসছি। তোমাদের ফিরিয়ে আনতে।
এই বলে ফোনটা কেটে গাড়ীটা স্টার্ট দিলাম। এক দমকা হাওয়া সেকেন্ডে ভিতরটাকে শীতল করে দিয়ে গেল। এফ এম টা অন্ করতেই গান বেজে উঠল –
“আমার ভিন দেশী তারা, আমার রাতেরই আকাশে, তুমি বাজালে একতারা, আমার চিলেকোঠার পাশে...”

এক ‘টুকরো’ ভালোবাসা

বেলা এখন বিকেল 4:30 । ব্যাগটা গুছানো প্রায় শেষ। একটু পরেই বেরিয়ে পরতে হবে I.S.B.T. উদ্দ্যশ্যে। দুই সপ্তাহ পর ফিরে যাব আমার প্রানের শহর শিলচরে। গত ১৫ দিন এখানে অনেক আনন্দ হয়েছে। কিন্তু ঘরের ডালভাতের স্বাদ আর নিজের বিছানায় শোবার আনন্দ আর কোথাও নেই। সে যাই হোক, এই মুহুর্ত্তে আমি গত ১৫ দিনের নস্টালজিয়ায় ভোগছি। জীবনের প্রথম চাকরির প্রথম ট্রেনিং বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা অচেনা চেহারাগুলো কি আস্বাভাবিকভাবে শুধু ১৫দিনেই যেন ছোটবেলার সাথী মনে হচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতেই রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। কিছু বন্ধুরা আগেই বেরিয়ে পড়েছে। বাকিরা কাল যাবে। এই বেলায় শুধু আমিই যাচ্ছি। একজন একজন করে সবাই কে গুডবাই বলে বেরিয়ে এসেছি। শুধু তানিয়াকে কোঁথাও খুঁজে পেলাম না। এই কদিনে অনেক বন্ধু হয়েছে। কিন্তু, তানিয়ার কথা বিশেষভাবে মনে থাকবে। আমরা রোজ ক্লাসে একসাথে বসতাম। বিকেলবেলাও যখন দল বেঁধে রোজ গুয়াহাটি দর্শনে বেরোতাম, তখনও সিটি বাসে আমাদের দুজনের একসাথে সিট্‌ রীজার্ভ থাকত। আজও সিটিবাসে উঠে বসেছি। কিন্তু, পাশের সিট্‌ আর রীজার্ভ নেই। সায়ন, রাজেষ, পায়েল ওরা আমাদের নিয়ে সবসময় ঠাট্টা করত। বলত আমাদের নাকি একসাথে খুব মানায়। তানিয়া তা শুনে হেসে মাথা নামিয়ে দিত, আর ওদের ঠাট্টা আরও বেড়ে যেত। আমার মনেও তখন কেমন যেন একটা শুরশুরি অনুভব হত। এইসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে বাসটা I.S.B.T. এসে গেল, বুঝতেই পারি নি। যাই হোক, সিটিবাস থেকে নেমে সোজা কাউন্টারে গিয়ে নিজের নাইটসুপারের খুঁজ নিলাম। সামনেই দাঁড়ানো ছিলো। তাই উঠে গিয়ে সিটে ব্যাগটা রেখে দিলাম। ২X১ বাস, ৩নং সিট- জানালার পাশে, আমার পছন্দের সিট। হাতে এখনও আঁধ ঘণ্টার মত সময় আছে। তাই নিচে নেমে এলাম। হঠাৎ মনে হল, একটা চেনা চেহারা এদিক ওদিক কিছু খোঁজছে। একটু সামনে গিয়ে দেখি এতো তানিয়া। পরনে আকাশী টপ্‌, কালকেই বিগবাজার থেকে কিনে ওকে গিফট্‌ করেছিলাম। দারুন মানিয়েছে ওকে। আমি একটু আগে বারতেই ও আমাকে দেখে ফেললো। আমার দিকে এসে বলল- যাওয়ার আগে একবার দেখা করার জন্যও অপেক্ষা করলে না।
-     তোমাকে তো অনেক খোঁজেছি, কোথায় ছিলে?
-     তোমাকে কি এমনি খালি হাতে যেতে দেব! তোমার জন্য একটা গীফট্‌ নিতে গিয়েছিলাম, আর তুমি একটুও অপেক্ষা করতে পারলে না, স্টুপিড্‌।
এই বলে একটা প্যাকেট আমার হাতে ধরিয়ে হাতটা জরিয়ে ধরল। কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ হয়ে রইলাম। কিছু অজানা অনুভুতি যেন চারিদিকে জড়িয়ে ধড়েছে। ভালোবাসার মিষ্টি গন্ধ যেন বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। ধ্যানভগ্ন ঘটলো নাইটসুপারের হর্নের আওয়াজে। সুপার যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তানিয়াও হাতটা ছেরে দিল। আমি বললাম তুমি এখন ঘরে যাও। এখান থেকে ভাঙ্গাগড় যেতে সময়ও লাগবে। সাবধানে যেও।
তানিয়া আর কিছুই বলল না। শুধু শেষবারে মত একবার আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেল। আর আমিও বাসে উঠে বসে পরলাম। হাতের গীফট্‌টা আর না দেখেই ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলাম।
পরের দিন সকাল ১০টা। জাস্ট ঘরে এসে ঢুকেছি। গুয়াহাটি-শিলচর রাস্তা এমনিতেই আদীমযুগের যাতায়াত ব্যবস্থাকেও হার মানিয়ে দেয়। রাতের ধকল কাটাতে তাই আগে স্নানটা সেরে নিলাম। মা চা এনে দিলেন। চাএ চুমুক দিতে দিতে চোঁখ পড়ল যুগশঙ্খ পত্রিকায়, আর নিমেষে যেন আমার পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে উঠলো-কাল ভাঙ্গাগড় এলাকায় এক ভয়ঙ্কর বোমা বিষ্ফোরনে একজন নিহত, আর অনেক আহত হয়েছেন। নিহত তরুনীর নাম তানিয়া চৌধুরী। খবরটা আর পড়ার আগেই কাগজটা হাত থেকে পরে গেল আর অজান্তেই চোঁখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল। অশ্রুসজল চোখে ভেসে উঠল তানিয়ার মুখ, আর মনে পড়ল কালকের গীফট্‌ এর কথা। এখনও খোলা হয় নি। ব্যাগ থেকে প্যাকেট্‌টা বের করে রেপারটা খুলে দেখি একটা গানের সিডি। তার উপরে বড় করে লেখা আমার ভিতর বাহিরে অন্তর অন্তরে আছো তুমি, হৃদয় জুড়ে

Sunday, September 2, 2012

শহর


অঞ্জন তোমার শহর

আজো সাদা কালো

রঙিন-

শুধু নিয়নের আলোয়;

তোমার শহরে আমার প্রথম রাত

কাটিয়েছি অভুক্ত

তবে আমি একা নই

সঙ্গী, তোমার অনেক শহরবাসী

পার্থক্য-

শুধু এটুকুই,

ওরা শুয়েছে ফুটপাতে

আর আমি,

পাঁচতলা হোটেলের ব্যালকনী থেকে

ওদের দেখি;

জানি না কত রাত ধরে

ওরা লড়াই করে চলেছে

একা একা

এই শহরের বুকে,

তবে ওদের দেখে না কেউই

না লাল আকাশ

না সাদা মেঘ,

শুধু আমি

অসহায় হয়ে দেখি

ফুটপাতে ছড়িয়ে থাকা

ক্লান্ত দেহগুলি

আর সারারাত কেটে যায়;

সব শহরই কি সমান?

Thursday, July 26, 2012

হাইকু-১

আমি তপ্ত সূর্যের
চোখে চোখ রেখে
কথা বলতে ভালোবাসি
কিন্তু তারপর-
যখন তোমাকে দেখি
বড় ঝাপসা দেখায়,
আসলে
চোখ আগেই ঝলসে যায়

Saturday, July 21, 2012

কোথায় যাই!

চারিদিকে শুধু ভয়
আতঙ্ক জাল বুনছে
সভ্যতা হাত ছেড়ে
পিছনপানে ছুটছে
কোথায় যাই!
বাতাসে বিষের গন্ধ
রাস্তায় নারী নগ্ন
প্ল্যাটফর্মে রক্ত ছেটানো
রক্ষক হেসে মরে;
আমি হাজার নালিশ করি
আমি চিৎকার করে মরি
আমি রাস্তায় ভিড় করি
রাজা সান্ত্বনা বিলি করে!
কোথায় যাই!

Saturday, July 14, 2012

শব্দ

শব্দ-
মুখ ফসকে
এদিক ওদিক ঘুরে,
ধাক্কা খায়
মনের সংবেদনায়
কখন উড় ধুল হয়ে
চোখে মিশে
জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে
কাগজের পাতায়
তখন তোমার মুখখানা
কবিতা হয়ে উঠে,
ভালোবাসা আঁকড়ে ধরে
বুকের ভেতরে
কলসের মুখ,
যাতে সংগ্রিহিত
ঘৃণা, ঈর্ষা, দ্বন্দ্ব
আবার কি কখন ফিরবে শব্দ
সেই হাসিমাখা ঠোটের কোনে?

Wednesday, July 11, 2012

শহর

অঞ্জন তোমার শহর
আজো সাদা কালো
রঙিন-
শুধু নিয়নের আলোয়;
তোমার শহরে আমি প্রথম রাত
কাটিয়েছি অভুক্ত
তবে আমি একা নই
সঙ্গী, তোমার অনেক শহরবাসী
পার্থক্য-
শুধু এটুকুই,
ওরা শুয়েছে ফুটপাতে
আর আমি,
পাঁচতলা হোটেলের ব্যালকনী থেকে
ওদের দেখি;
জানি না কত রাত ধরে
ওরা লড়াই করে চলেছে
একা একা
এই শহরের বুকে,
তবে ওদের দেখে না কেউই
না লাল আকাশ
না সাদা মেঘ,
শুধু আমি
অসহায় হয়ে দেখি
ফুটপাতে ছড়িয়ে থাকা
ক্লান্ত দেহগুলি
আর সারারাত কেটে যায়;
সব শহরই কি সমান?

Sunday, July 8, 2012

টানা টানা চোখ

টানা টানা চোখ

মনে আছে কি তোমার

সেই প্রথম দেখা,

চিনি ছাড়া কফি

আর তোমার হাসি

কি মিষ্টি ছিল সেই বিকেল



টানা টানা চোখ

আজও মনে পড়ে

চোখ ঢেকে তোমার

আমাকে প্রথম ছুঁয়ে দেখা

আদর স্পর্শ

আর ভালোবাসার মাঝে

কি মিষ্টি ছিল সেই বিকেল



টানা টানা চোখ

ভুলে যাও নি নিশ্চয়

সেই শনিবারের ভালোবাসা

আধার ঘরে

তোমার আলোয়

কি আলোকিত ছিল সেই বিকেল



টানা টানা চোখ

স্মৃতির এ্যালবামে

আরও কত বিকেল সাজান

তোমাকে নিয়ে

তবু জানি কেন

তোমার দুষ্টুমি

এখন লোকচুরি খেলে

আমার সাথে,

ইচ্ছে হয় সামনে টেনে

বুকজোরে ধরে রাখি

আর মিষ্টি হয়ে উঠুক

এমনি, প্রতিটি বিকেল।

Friday, July 6, 2012

সুপ্ত বাসনা

আর কতদিন
ছুটতে হবে
তোমার জন্যে!
আর কতদিন
কাটাতে হবে
এই বন্দী জীবন!
আমি ক্লান্ত;
আর ছুটতে চাইনা
তোমার স্বপ্নের রং মশাল পিছু
আমি বাঁচতে চাই
নিজের মত
উড়তে চাই
আমার আকাশে
দেখতে চাই
পৃথিবীটাকে-
আমার ক্যামেরার লেন্স মাঝে;
আমার ধুলো-জমা
কবিতার খাতা
রোজ আমায় ডাকে
আমি যেতে চাই তার সাথে
তোমার দুনিয়ায় থাক সুখী
আজ বিদায় জানাই তোমাকে

Wednesday, July 4, 2012

যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে...

যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে......

পার্কিং থেকে গাড়ীটা বের করতে করতে এভাবেই মোবাইলটা বেজে উঠল। গাড়ীটা একটু সাইড করে মোবাইলটা তোলে দেখলামগদাই কলিং।

-হ্যালো।

-কি রে কথায় তুই?

-এই বের হচ্ছি।

-এখনও তুই শিলচরে?

-আর বলিস না, কালকে ফেসবুকে একটা আড্ডা জমে গেছিল, তাই ঘুমোতে দেরি হয়ে গেল। ৯টার সময় উঠেছি। সবাই কি এসে গেছে?

-অল-মোস্ট। তুই তাড়াতাড়ি আয়।

-হ্যাঁ হ্যাঁ, আসছি; বাই।

মোবাইলটা পাশে সরিয়ে গাড়ীটা স্টার্ট দিলাম আর মিউজিক প্লেয়ারটাও অন করে দিলাম। অঞ্জন দত্ত গেয়ে উঠলেনআমি বৃষ্টি দেখেছি…

আজ মনটা কেমন যেন একটা অদ্ভুত অভিনয় করছে। ১৪ বৎসর পর আজ আবার আমার স্কুলে যাচ্ছি। যেন রামচন্দ্রের বনবাস যাপনের পর অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন। ইস্, কার সাথে কি মিলচ্ছি! তবে সত্যি, আজ একটা অদ্ভুত আবেগ কাজ করছে অন্তরে। আজ আমাদের স্কুলের স্বর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উৎযাপন অনুষ্ঠান। তাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহেই শিশির স্যার নিজে আমাকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি এখন প্রধান শিক্ষক। স্যার আমাকে সবসময়ই খুব স্নেহ করতেন। তাই উনার কথা রাখতেই এই ব্যস্ত কর্মজীবনের মধ্যেও একদিনের ছুটি বের করে নিয়েছি। নাহলে ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করে যে শহর ছেড়ে এসেছিলাম, ১৪ বৎসরেও সেই শহরে আর একটিবার ফিরে যেতে পারিনি।

গদাই বলছিল আমাদের ক্লাসের প্রায় সবাই নাকি আসছে। গদাই আমার স্কুল-ফ্রেন্ড, যাকে স্কুলের বাইরের দুনিয়ায় প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ মাস আগে কোথা থেকে জানি না আমার নাম্বারটা জোগাড় করে ফোন করল। ওর সাথে সেদিনের ১০ মিনিটের কথায় স্কুলের ১০ বৎসর যেন ছবি হয়ে ভেসে উঠেছিল। আজ আবার সবার সাথে দেখা হবে।

জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। কিন্তু, স্কুলের সেই দশটি বছর আজও মিস্ করি। মিস্ করি সেই বন্ধুদের, সেই ফেলে আসা সময়। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল রঞ্জন, পড়াশুনায় ততটা ভালো ছিল না। মেট্রিকের পর আমি যখন শিলচর চলে আসি, সে বদরপুরেই থেকে যায়। সময় বেস্ট-ফ্রেন্ডও পালটে দেয়। এখন একটা চিট্ফান্ডে কাজ করছে। মধ্যে মধ্যে কথা হয়। এমন অনেক বন্ধুই সময়ের সাথে সাথে দূর হয়ে গেছে। জানিনা সবাইকে এখন চিনতেও পারব কি না! মনে হয় সুভাসের কথা, কিভাবে কথা বলতে বলতে আটকে যেত। একবার একটা মেয়েকে প্রোপস্‌ করতে গিয়ে বলা শেষ হওয়ার আগেই মেয়েটা চলে গিয়েছিল। যখন ক্লাস ১০এ ছিলাম, আমাদের ক্লাসরুমটা থেকে মেয়েদের ক্লাসরুমটা সোজা দেখা যেত। যদি একটা মেয়ে ফিরে একবার দেখে নিত, তবে সে ছিল এক বিরাট প্রাপ্তি।

হ্যাঁ। আমিও একজনকে দেখতাম। মিষ্টি হাসি ছিল যার, দেখতে একদম প্রীতি জিণ্টা মনে হত। উত্তরে সেও দেখত, লাজুক চোখে। ১সেকেন্ডের চোখে চোখ, সেকেন্ডের মুচকি হাসি, এইতো ছিল ভালোবাসা। পিয়ালী সবসময়ই খুব চঞ্চল ছিল। আর সেই চঞ্চলতাই আমার ভালো লাগত। ক্লাস ১ এ সে প্রথম এসেছিল, আর আমি দ্বিতীয়। তখন ও ছিল আমার প্রধান শত্রু। তারপর যখন ক্লাস প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম প্রেম নামক কিচ্ছু একটা হয়, স্থির করেছিলাম ক্লাসের সব থেকে সুন্দর মেয়ে পিয়ালীই হবে আমার প্রেমিকা। উঠার পর শর্মিষ্ঠা বলেছিল, পিয়লিও নাকি আমায় পছন্দ করে। তারপর জল খাওয়ার বাহানায় কতবার যে ওদের ক্লাসরুমের পাশ দিয়ে যেতাম। যখন বৃত্তি পরীক্ষার কোচিং চলছিল, তখন একদিন হঠাৎ করে পিয়ালী উঠে এসে আমার ব্যাগ থেকে একটা কলম নিয়ে গিয়েছিল। আর তা দেখে কুণাল বলে দিয়েছিলনে নে, রাজীবের সব জিনিসে তো তোরই একমাত্র অধিকার। বেচারা কুণাল, সেদিন যা পিটুনি খেয়েছিল ওর হাতে। এই সব ঘটনা ওকে আমার মনের আরও পাশে নিয়ে এসেছিল। তবু জানি না কেন ক্লাস এর পরীক্ষার পর যখন স্বপ্নার হাতে পিয়ালীর জন্য প্রথম প্রেম পত্রটা পাঠিয়েছিলাম, উত্তরটানাএসেছিল। ভার হৃদয়ে তাই নববর্ষের গ্রিটিংসে লিখেছিলামইউ ব্রোক মাই হার্ট। আর পরদিন বিকেলেই আবার স্বপ্নার হাতে আরেকটা গ্রিটিংস এলোআই এম্‌ অলউয়েস্‌ ইয়রস্‌। জানুয়ারি মাসেও সেদিন বৃষ্টি পড়েছিল, আর আমি সেই বৃষ্টিকে প্রাণ ভরে ছুঁয়ে দেখেছিলাম। তারপর ভালোবাসা চলেছিল - একটু দেখা, একটু হাসি, আর অনেকগুলো প্রেমপত্রের মধ্য দিয়ে।

দেখতে দেখতে একটি বৎসর চলে গেল। মেট্রিক পাশ করে আমি চলে এলাম শিলচরে, আর চলে গেল শিলিগুড়ি। সেদিন থেকে আজ অব্ধি আর দেখা হয়নি আমাদেরক্যারিয়ারের যুদ্ধে হারিয়ে গিয়েছিল আমাদের দুজনেরই প্রথম ভালোবাসা।

এসব ভাবতে ভাবতেই আমার গাড়ীটা স্কুলের প্রায় পাশে চলে এলো। সেই পুরনো পরিচিত গলির মাঝে আমার গাড়ীর জন্যে একটা পার্কিং খোজে নিলাম। গদাই বলছিল আজ পিয়ালিও নাকি আসছে! কথাটা শুনে আঁতকে উঠেছিলাম। হয়ত এজন্যেই অনুভূতিগুলো কেমন অদ্ভুত লাগছে। তবে দেখা হলে কি বলা উচিত?/আমি কি আগে কথা বলব?/ না দূরে দুরেই থাকব। উফ্, আমি এত ভাবছি কেন? তবে কি আমার এখনও ওর জন্যে......

যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে......

ফোনটা আবার বেজে উঠল, দেখলামহোম মিনিস্টার কলিং

-হ্যালো

-কি গো, পৌঁছে গেছো?

-হ্যাঁ, এই জাস্ট গাড়ী থেকে বের হচ্ছি।

-ঠিক আছে, দেখ! পুরনো বন্ধুদের পেয়ে ভুলে যেয় না, বাড়ীতে বউ অপেক্ষা করছে...

-তোমাকে কি ভোলতে পারব সোনা, চিন্তা কর না, তাড়াতাড়ি চলে আসব, বাই

-বাই।

ভাবনার আকাশ থেকে বাস্তবের মাটিতে নিমেষেই ফিরে এলাম। হাসিমুখেই পা বাড়ালাম আমার প্রিয় স্কুলের গেটের ভিতরে।