Thursday, July 26, 2012

হাইকু-১

আমি তপ্ত সূর্যের
চোখে চোখ রেখে
কথা বলতে ভালোবাসি
কিন্তু তারপর-
যখন তোমাকে দেখি
বড় ঝাপসা দেখায়,
আসলে
চোখ আগেই ঝলসে যায়

Saturday, July 21, 2012

কোথায় যাই!

চারিদিকে শুধু ভয়
আতঙ্ক জাল বুনছে
সভ্যতা হাত ছেড়ে
পিছনপানে ছুটছে
কোথায় যাই!
বাতাসে বিষের গন্ধ
রাস্তায় নারী নগ্ন
প্ল্যাটফর্মে রক্ত ছেটানো
রক্ষক হেসে মরে;
আমি হাজার নালিশ করি
আমি চিৎকার করে মরি
আমি রাস্তায় ভিড় করি
রাজা সান্ত্বনা বিলি করে!
কোথায় যাই!

Saturday, July 14, 2012

শব্দ

শব্দ-
মুখ ফসকে
এদিক ওদিক ঘুরে,
ধাক্কা খায়
মনের সংবেদনায়
কখন উড় ধুল হয়ে
চোখে মিশে
জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে
কাগজের পাতায়
তখন তোমার মুখখানা
কবিতা হয়ে উঠে,
ভালোবাসা আঁকড়ে ধরে
বুকের ভেতরে
কলসের মুখ,
যাতে সংগ্রিহিত
ঘৃণা, ঈর্ষা, দ্বন্দ্ব
আবার কি কখন ফিরবে শব্দ
সেই হাসিমাখা ঠোটের কোনে?

Wednesday, July 11, 2012

শহর

অঞ্জন তোমার শহর
আজো সাদা কালো
রঙিন-
শুধু নিয়নের আলোয়;
তোমার শহরে আমি প্রথম রাত
কাটিয়েছি অভুক্ত
তবে আমি একা নই
সঙ্গী, তোমার অনেক শহরবাসী
পার্থক্য-
শুধু এটুকুই,
ওরা শুয়েছে ফুটপাতে
আর আমি,
পাঁচতলা হোটেলের ব্যালকনী থেকে
ওদের দেখি;
জানি না কত রাত ধরে
ওরা লড়াই করে চলেছে
একা একা
এই শহরের বুকে,
তবে ওদের দেখে না কেউই
না লাল আকাশ
না সাদা মেঘ,
শুধু আমি
অসহায় হয়ে দেখি
ফুটপাতে ছড়িয়ে থাকা
ক্লান্ত দেহগুলি
আর সারারাত কেটে যায়;
সব শহরই কি সমান?

Sunday, July 8, 2012

টানা টানা চোখ

টানা টানা চোখ

মনে আছে কি তোমার

সেই প্রথম দেখা,

চিনি ছাড়া কফি

আর তোমার হাসি

কি মিষ্টি ছিল সেই বিকেল



টানা টানা চোখ

আজও মনে পড়ে

চোখ ঢেকে তোমার

আমাকে প্রথম ছুঁয়ে দেখা

আদর স্পর্শ

আর ভালোবাসার মাঝে

কি মিষ্টি ছিল সেই বিকেল



টানা টানা চোখ

ভুলে যাও নি নিশ্চয়

সেই শনিবারের ভালোবাসা

আধার ঘরে

তোমার আলোয়

কি আলোকিত ছিল সেই বিকেল



টানা টানা চোখ

স্মৃতির এ্যালবামে

আরও কত বিকেল সাজান

তোমাকে নিয়ে

তবু জানি কেন

তোমার দুষ্টুমি

এখন লোকচুরি খেলে

আমার সাথে,

ইচ্ছে হয় সামনে টেনে

বুকজোরে ধরে রাখি

আর মিষ্টি হয়ে উঠুক

এমনি, প্রতিটি বিকেল।

Friday, July 6, 2012

সুপ্ত বাসনা

আর কতদিন
ছুটতে হবে
তোমার জন্যে!
আর কতদিন
কাটাতে হবে
এই বন্দী জীবন!
আমি ক্লান্ত;
আর ছুটতে চাইনা
তোমার স্বপ্নের রং মশাল পিছু
আমি বাঁচতে চাই
নিজের মত
উড়তে চাই
আমার আকাশে
দেখতে চাই
পৃথিবীটাকে-
আমার ক্যামেরার লেন্স মাঝে;
আমার ধুলো-জমা
কবিতার খাতা
রোজ আমায় ডাকে
আমি যেতে চাই তার সাথে
তোমার দুনিয়ায় থাক সুখী
আজ বিদায় জানাই তোমাকে

Wednesday, July 4, 2012

যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে...

যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে......

পার্কিং থেকে গাড়ীটা বের করতে করতে এভাবেই মোবাইলটা বেজে উঠল। গাড়ীটা একটু সাইড করে মোবাইলটা তোলে দেখলামগদাই কলিং।

-হ্যালো।

-কি রে কথায় তুই?

-এই বের হচ্ছি।

-এখনও তুই শিলচরে?

-আর বলিস না, কালকে ফেসবুকে একটা আড্ডা জমে গেছিল, তাই ঘুমোতে দেরি হয়ে গেল। ৯টার সময় উঠেছি। সবাই কি এসে গেছে?

-অল-মোস্ট। তুই তাড়াতাড়ি আয়।

-হ্যাঁ হ্যাঁ, আসছি; বাই।

মোবাইলটা পাশে সরিয়ে গাড়ীটা স্টার্ট দিলাম আর মিউজিক প্লেয়ারটাও অন করে দিলাম। অঞ্জন দত্ত গেয়ে উঠলেনআমি বৃষ্টি দেখেছি…

আজ মনটা কেমন যেন একটা অদ্ভুত অভিনয় করছে। ১৪ বৎসর পর আজ আবার আমার স্কুলে যাচ্ছি। যেন রামচন্দ্রের বনবাস যাপনের পর অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন। ইস্, কার সাথে কি মিলচ্ছি! তবে সত্যি, আজ একটা অদ্ভুত আবেগ কাজ করছে অন্তরে। আজ আমাদের স্কুলের স্বর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উৎযাপন অনুষ্ঠান। তাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহেই শিশির স্যার নিজে আমাকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি এখন প্রধান শিক্ষক। স্যার আমাকে সবসময়ই খুব স্নেহ করতেন। তাই উনার কথা রাখতেই এই ব্যস্ত কর্মজীবনের মধ্যেও একদিনের ছুটি বের করে নিয়েছি। নাহলে ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করে যে শহর ছেড়ে এসেছিলাম, ১৪ বৎসরেও সেই শহরে আর একটিবার ফিরে যেতে পারিনি।

গদাই বলছিল আমাদের ক্লাসের প্রায় সবাই নাকি আসছে। গদাই আমার স্কুল-ফ্রেন্ড, যাকে স্কুলের বাইরের দুনিয়ায় প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ মাস আগে কোথা থেকে জানি না আমার নাম্বারটা জোগাড় করে ফোন করল। ওর সাথে সেদিনের ১০ মিনিটের কথায় স্কুলের ১০ বৎসর যেন ছবি হয়ে ভেসে উঠেছিল। আজ আবার সবার সাথে দেখা হবে।

জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। কিন্তু, স্কুলের সেই দশটি বছর আজও মিস্ করি। মিস্ করি সেই বন্ধুদের, সেই ফেলে আসা সময়। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল রঞ্জন, পড়াশুনায় ততটা ভালো ছিল না। মেট্রিকের পর আমি যখন শিলচর চলে আসি, সে বদরপুরেই থেকে যায়। সময় বেস্ট-ফ্রেন্ডও পালটে দেয়। এখন একটা চিট্ফান্ডে কাজ করছে। মধ্যে মধ্যে কথা হয়। এমন অনেক বন্ধুই সময়ের সাথে সাথে দূর হয়ে গেছে। জানিনা সবাইকে এখন চিনতেও পারব কি না! মনে হয় সুভাসের কথা, কিভাবে কথা বলতে বলতে আটকে যেত। একবার একটা মেয়েকে প্রোপস্‌ করতে গিয়ে বলা শেষ হওয়ার আগেই মেয়েটা চলে গিয়েছিল। যখন ক্লাস ১০এ ছিলাম, আমাদের ক্লাসরুমটা থেকে মেয়েদের ক্লাসরুমটা সোজা দেখা যেত। যদি একটা মেয়ে ফিরে একবার দেখে নিত, তবে সে ছিল এক বিরাট প্রাপ্তি।

হ্যাঁ। আমিও একজনকে দেখতাম। মিষ্টি হাসি ছিল যার, দেখতে একদম প্রীতি জিণ্টা মনে হত। উত্তরে সেও দেখত, লাজুক চোখে। ১সেকেন্ডের চোখে চোখ, সেকেন্ডের মুচকি হাসি, এইতো ছিল ভালোবাসা। পিয়ালী সবসময়ই খুব চঞ্চল ছিল। আর সেই চঞ্চলতাই আমার ভালো লাগত। ক্লাস ১ এ সে প্রথম এসেছিল, আর আমি দ্বিতীয়। তখন ও ছিল আমার প্রধান শত্রু। তারপর যখন ক্লাস প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম প্রেম নামক কিচ্ছু একটা হয়, স্থির করেছিলাম ক্লাসের সব থেকে সুন্দর মেয়ে পিয়ালীই হবে আমার প্রেমিকা। উঠার পর শর্মিষ্ঠা বলেছিল, পিয়লিও নাকি আমায় পছন্দ করে। তারপর জল খাওয়ার বাহানায় কতবার যে ওদের ক্লাসরুমের পাশ দিয়ে যেতাম। যখন বৃত্তি পরীক্ষার কোচিং চলছিল, তখন একদিন হঠাৎ করে পিয়ালী উঠে এসে আমার ব্যাগ থেকে একটা কলম নিয়ে গিয়েছিল। আর তা দেখে কুণাল বলে দিয়েছিলনে নে, রাজীবের সব জিনিসে তো তোরই একমাত্র অধিকার। বেচারা কুণাল, সেদিন যা পিটুনি খেয়েছিল ওর হাতে। এই সব ঘটনা ওকে আমার মনের আরও পাশে নিয়ে এসেছিল। তবু জানি না কেন ক্লাস এর পরীক্ষার পর যখন স্বপ্নার হাতে পিয়ালীর জন্য প্রথম প্রেম পত্রটা পাঠিয়েছিলাম, উত্তরটানাএসেছিল। ভার হৃদয়ে তাই নববর্ষের গ্রিটিংসে লিখেছিলামইউ ব্রোক মাই হার্ট। আর পরদিন বিকেলেই আবার স্বপ্নার হাতে আরেকটা গ্রিটিংস এলোআই এম্‌ অলউয়েস্‌ ইয়রস্‌। জানুয়ারি মাসেও সেদিন বৃষ্টি পড়েছিল, আর আমি সেই বৃষ্টিকে প্রাণ ভরে ছুঁয়ে দেখেছিলাম। তারপর ভালোবাসা চলেছিল - একটু দেখা, একটু হাসি, আর অনেকগুলো প্রেমপত্রের মধ্য দিয়ে।

দেখতে দেখতে একটি বৎসর চলে গেল। মেট্রিক পাশ করে আমি চলে এলাম শিলচরে, আর চলে গেল শিলিগুড়ি। সেদিন থেকে আজ অব্ধি আর দেখা হয়নি আমাদেরক্যারিয়ারের যুদ্ধে হারিয়ে গিয়েছিল আমাদের দুজনেরই প্রথম ভালোবাসা।

এসব ভাবতে ভাবতেই আমার গাড়ীটা স্কুলের প্রায় পাশে চলে এলো। সেই পুরনো পরিচিত গলির মাঝে আমার গাড়ীর জন্যে একটা পার্কিং খোজে নিলাম। গদাই বলছিল আজ পিয়ালিও নাকি আসছে! কথাটা শুনে আঁতকে উঠেছিলাম। হয়ত এজন্যেই অনুভূতিগুলো কেমন অদ্ভুত লাগছে। তবে দেখা হলে কি বলা উচিত?/আমি কি আগে কথা বলব?/ না দূরে দুরেই থাকব। উফ্, আমি এত ভাবছি কেন? তবে কি আমার এখনও ওর জন্যে......

যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে......

ফোনটা আবার বেজে উঠল, দেখলামহোম মিনিস্টার কলিং

-হ্যালো

-কি গো, পৌঁছে গেছো?

-হ্যাঁ, এই জাস্ট গাড়ী থেকে বের হচ্ছি।

-ঠিক আছে, দেখ! পুরনো বন্ধুদের পেয়ে ভুলে যেয় না, বাড়ীতে বউ অপেক্ষা করছে...

-তোমাকে কি ভোলতে পারব সোনা, চিন্তা কর না, তাড়াতাড়ি চলে আসব, বাই

-বাই।

ভাবনার আকাশ থেকে বাস্তবের মাটিতে নিমেষেই ফিরে এলাম। হাসিমুখেই পা বাড়ালাম আমার প্রিয় স্কুলের গেটের ভিতরে।